না, এটি কোনো গল্প নয়। ছোট একটি অভিজ্ঞতা। কার কি কাজে লাগবে তা জানিনা। তবে মন
চাইল তাই লিখছি। গত সপ্তাহের কথা। সকালের দুটো ক্লাশ শেষ করে ৩০ মিনিট কফি ব্রেক। স্টাফ
রুমের বাইরে ছোট্ট একটি বারান্দা। কফি টাইমে এ জায়গাটা চমৎকার। আশেপাশে নানান জাতের
গাছ-গাছালি। বাতাস এলে নাচে। এ কলেজের বাগানটি বেশ বড়। আমি এ কলেজে পার্ট-টাইম আসি।
দেখি গার্ডেনার (মানে সোজা বাংলায় যাকে বলি ‘মালি’), সেও আজ হঠাৎ এসে আমার সাথে কফিতে যোগ দিল।
' তা তোমার ওয়াইফ কোথায় কাজ করে’? সে বলল, ‘এখানে, এ কলেজেই’। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তাই নাকি? কই জানতাম নাতো, তা তুমি কোন টিচারের কথা
বলছ? আমি তো এখানে সবাইকেই চিনি।
সে তার স্ত্রীর নাম হিসেবে
একটি নামের উল্লেখ করল।
কফিটা গলায় বোধ হয় মূহূর্তের
জন্য একটু আটকে গিয়েছিল । নামটা শুনে একটু
কি ভিমরি খেয়েছিলাম? ঢোক গিলে আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম বললে? (মনে মনে হয়তঃ ভাবছিলাম, ব্যাটা ফাজলামো করছিস্
নাতো)?
না আমি আর তৃতীয়বার তার
ওয়াইফের নাম জিজ্ঞেস করিনি। ততক্ষণে আমার অনুসন্ধানী চোখ চলে গেছে তার শার্টের বামদিকে
লাগানো ন্যাম-ব্যাজটির উপর।
মালির ন্যাম-ব্যাজটিতে
ফ্যামিলি নামের অংশ হিসাবে যার নামটি লেখা আছে সেটি এ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের।
‘হ্যালো জেইম্স, কেমন আছো’? তাকে বেশ ক্লান্তই দেখাচ্ছিল। হাতে-পায়ে ধুলো। একটু আগেও তাকে কতগুলো ইট-সুরকি-আগাছা
ইত্যাদি শাবল দিয়ে ট্রাকে তুলতে দেখেছি। পুরো প্রতিষ্ঠানের সবগুলো গাছের যত্ন সেই-ই
করে। তার কাজ ও জীবনের অনেক কথাই কথায় কথায় জানালো। সে একজন লাইসেন্সধারী ট্রেইন্ড
গার্ডেনার। এ প্রতিষ্ঠানে পার্ট-টাইম করে, এছাড়া আরও দু’টি বিদ্যালয়েও একই কাজ
করে। একটি মাত্র ছেলে। এখাঙ্কার একটি স্কুলে যায়। প্রতিদিন কাজ শেষে সে ছেলেকে স্কুল
থেকে ড্রাইভ করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। কারণ তার স্ত্রী সাংঘাতিক ব্যস্ত মহিলা। ফুল-টাইম
কাজ করে বিধায় সময় দিতে পারেনা, সে বাড়ী ফেরে আরও দেরী করে। আরও বুঝলাম তারা বেশ সুখী পরিবার।
তার শুধু একটাই আক্ষেপ, গত বছর কাজ করতে গিয়ে হাটুতে বড় ধরনের একটা ইনজুরি খেয়েছিল, অপারেশান করে ভালো হলেও পুরোপুরি যুকিমুক্ত নয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কিছু কিছু রিস্কি কাজ করার লাইসেন্স হারিয়েছি।'
সে আবার একই নামটাই আমাকে
জানালো!!
কেন জানি পল্লীকবি জসিম
উদ্দিনের কথা মনে পড়ে গেল। বিলেতে যে হোটেল-বয়ের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে উপহার
হিসেবে সস্তা পাউরুটি কিনেছিলেন। কিন্তু আমার হাতে তো এখানে কোনো পাউরুটি নেই! তবে
কি মনের কোণে অজান্তে পাউরুটি জাতীয় কোনো অনুভূতি কি লুকানো ছিল? তা নাহলে আমি তার স্ত্রীর নাম দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন?
আজমীর হোসেন
নাইটক্লিফ, ডারউইন, অষ্ট্রেলিয়া
১১.১১.১২
No comments:
Post a Comment