WELCOME TO AZMIR'S BLOG

Thank you for visiting my Blog! If you have any comments or suggestions relating to the posts or contents of this Blog, you are most welcome to do so by using 'post a comment' section below every post. You can also simply rate a post by clicking either 'funny', 'interesting' or 'cool' box. Personally I believe in 'the Hegelian Dialectic', and I strongly advocate for free speech and open discussion. Here I am trying to have a meaningful and productive dialogue with you. Your every piece of advice helps me to improve the Blog!
Cheers Azmir !

Tuesday, October 8, 2013

কুকুরের ডাক ও ডাবল মার্ডার


বেশ কিছুদিন তিমুর সাগর পাড়ে যাওয়া হয়না। বাসা থেকে মিনিট পাঁচেকের পায়ে হাঁটা দূরত্ব। তাই আজ রওয়ানা হলাম। রাস্তার পাশের কোনো একটি বাড়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছি, এমূহূর্তে বাড়ীর ফেঞ্চের ভেতর থেকে একটা কুকুর অকস্মাৎ এমন জোরে ঘেউ করে উঠল যে একেবারে হার্টবিট বন্ধ হবার অবস্থা। রক্ষা শুধু এখানে বাড়ীতে কেহ গার্ড কুকুর রাখলে পুরো বাড়ীর চারপাশেই ফেঞ্চ রাখে। নতুন বা অপরিচিত কাউকে দেখলেই কুকুরে ডাক ছাড়ে। সে নতুনকেই অমঙ্গল মনে করে। কুকুরের এ বৈশিষ্ট্য তার মালিকের বাড়ীর নিরাপত্তা রক্ষায় খুব মঙ্গলজনক, সন্দেহ নাই, তবে বহু পথচারীর জন্য তা ভীষণ অপ্রীতিকর!  যাহোক, কুকুরের ডাক শুনে আমার বছর দুয়েক আগের আরেকটি কুকুরের কথা মনে পড়ে গেল। ঐ কুকুরটিকে কোনোদিন আমি দেখিনি, তার ডাকও শুনিনি কোনোদিন ; যদিও কোনো একদিন তার ডাক দেওয়ার হয়তঃ খুব প্রয়োজন ছিল! তবে ডাক না দিয়েও সে একটা লোককে চিনিয়ে দিয়েছিল!

বছর দুয়েক আগের কথা। তখন অন্য এক অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকি। বর্তমান বাসাটি থেকে মাত্র মাইল দেড়েক দূরে। সকাল ৬ টার মত হবে, কলিং বেল বাজল। এত সকালে কে আবার আসল? দরজা খুলে দেখি দু’জন দাঁড়িয়ে আছেন। দ্রুত নিজেদের পরিচয় দিলেন পুলিশ ডিপার্টম্যান্টের হোমিসাইড ডিটেকটিভ বলে। 

হোমিসাইড ডিটেকটিভ? ঘুম ভেঙ্গে দরজায় হোমিসাইড ডিটেকটিভ? কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করলাম? বেশ বিস্মিত হয়েছি। তারা জানাল, আপনার দু’ বাসা পর গতরাতে যে মার্ডার হয়েছে সে ব্যাপারে আপনার সাথে কিছু বিষয়ে কথা বলতে পারি কি?

‘মার্ডার? আমি তো কিছুই জানি না।’

‘জানেন না, গতরাতে ঐ পাশের বাসায়  বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দু’জনই মার্ডার হয়েছেন। ডাবল মার্ডার! আপনার যদি সম্মতি থাকে, তাহলে আমরা আপনার একটি পুরো স্টেটমেন্ট নিতে পারি।’

ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দু’জনকেই প্রায়শঃ দেখেছি, যদিও তেমন পরিচয় নেই। বয়স তাদের ৭০ এর কম হবেনা। আমার দু’বাসা পরে থাকে বটে, তবে দ্বিতীয় বাসাটির পরে মাঝে একটা উঁচু দেওয়াল। একারণে তাদের কমপ্লেক্সটা আসলে বেশ পৃথক। ডিটেকটিভদের সাথে কথা বলছি আর অ্যাপার্টমেন্টেটির দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে। ডিটেকটিভদের একজন আবার এর মাঝে জানতে চাইলেন, আপনার ঐ দ্বিতীয় প্রতিবেশীটি কি এখন বাসায় আছেন? বললাম, নক করেই দেখুন না? সে উত্তরে বলল, করেছি, কিন্তু কেহই ভেতর থেকে সাড়া দিচ্ছে না। ভাবলাম, সাড়া না দিলে তারা ভেতরে নেই। ইনি তাহলে আবার আমাকে একথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? তবে অবশ্য দৃষ্টিটা একটু পরে চলে গিয়েছিল প্রতিবেশীর বাসার কোনায় দেওয়ালের উপর এয়ার কন্ডিশনটির দিকে। ওটি থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। তার মানে এয়ারকন চালু আছে। তবে কি তারা ভেতরে নেই? ততক্ষণে আশপাশ দেখে বুঝতে শুরু করেছি, আসলে আশেপাশের সব ভাড়াটেরাই ভেতরে আছেন, এবং ডিটেকটিভদ্বয়ও  ইতোমধ্যে সবাইকে নক করেছেন, কিন্তু কেউ দরজা খুলছেন না। এখানে কেউ কথা বলতে না চাইলে, পুলিশ কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তাকে কথা বলাতে বাধ্য করাতে পারেন না। কেউ ভলান্টিয়ারিলি বলতে চাইলে সেটা ভিন্নকথা। তবুও আমার কাছে ব্যাপারটা সাংঘাতিক খারাপ লেগেছে। সবাই দরজা বন্ধ করে নিজেদের ‘কথা না বলার রাইট’ সংরক্ষণ করছে, অথচ এক প্রতিবেশী বৃদ্ধযুগল গতরাতে খুন হয়ে গেছেন, ব্যাপারটা একদম স্বার্থপরের মত মনে হচ্ছিল।  তাই ডিটেকটিভটি যখন আবার জিজ্ঞেস করল, আপনি স্টেটম্যান্ট দিতে রাজী আছেন কিনা, আমি হ্যাঁ-ই বললাম, তবে এও বললাম, দেখুন, আমি আসলে কিছুই জানি না, আমি বরং এইমাত্র আপনার মুখ থেকেই শুনছি যে, ঐ বাসায় দু’জন মার্ডার হয়েছেন। আমার স্টেটম্যান্ট আপনার কতটুকু কাজে লাগবে জানিনা, তবে রাজী আছি।

 ‘অবশ্যই কাজে লাগবে’ একজন মৃদুস্বরে জানাল, ‘আই এপ্রিশিয়েট ইফ ইউ গিভ এন স্টেটম্যান্ট!’

এবার তাদের ভেতরে আসতে বললাম। একজন ডিটেকটিভই প্রবেশ করল। বাকীজন অন্য কোনো বাসায় নক করতে চলে গেল। তাঁরা বেশ তড়িৎকর্মা, স্মার্ট ও কথাবার্তায় মার্জিত।  ডিটেকটিভটি একটি বেশ লম্বা ফরম বের করে আমাকে প্রশ্ন করতে থাকলেন। কতগুলো আমার নিজের সম্পর্কে সাধারণ কিছু ইঙ্কোয়ারি। আমি এক ফাঁকে জানতে চাইলাম, আপনারা কিভাবে খবর পেলেন যে মার্ডার হয়েছে? বললেন, ‘তাদের একটি ছেলে আছে, যিনি বেশ কিছুদিন হল তাঁদের সাথে থাকছেন। সেই পুলিশে ফোন করে জানায়, বাসায় তার মা-বাবার ডেডবডি পড়ে আছে, ছুরি মেরে কেউ তাদের হত্যা করেছে!

 এরপর তিনি উক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সহিত আমার জানাশোনা কেমন জানতে চাইলেন। তিনি বেশ দ্রুতই কাজ করে যাচ্ছেন আর লিখছেন। কথাবার্তায় তেমন গাম্ভীর্যতা নেই। আমার দিকে তেমন চোখ তুলে কথাও বলছেন না, চিন্তা করছেন আর অধিকাংশ সময়ই তার দৃষ্টিটি ফরমের উপর। যদিও আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝি, এসব মার্ডার কেসের ক্ষেত্রে তিনি সন্দেহের তালিকা থেকে প্রতিবেশীদেরও বাদ দেননি। এজন্যই লোকজন কথা বলতে বের হয়না।  

 শেষের দিকে এসে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করলেনঃ গতরাতে ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে আপনি কোথায় ছিলেন?

‘এখানে, বাসায়।’

‘আপনি কি ঐ সময় কোনোপ্রকার শব্দ শুনতে পাননি?’

‘না’।

‘একটু ভেবে দেখুন, কোনোপ্রকার শব্দ যা আপনার কানে এসে থাকতে পারে।’

একটু ভাবলাম। তবে একই উত্তরঃ ‘না, আমি তেমন কোনো শব্দ শুনেছি বলে মনে করি না।’

‘ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একটি পোষা কুকুর আছে, যা বাসার ভেতরে তাদের সাথেই থাকে। আপনি গতরাতে কখনও কি ঐ বাসা থেকে কুকুরের  কোনো ডাক শুনতে পেয়েছিলেন?’

‘না, তেমন কোনো ডাক শুনেছি বলে মনে হয়না।’

‘আরেকটু স্মরণ করার চেষ্টা করুন, কুকুরের কোনো ডাক গতরাতে যেকোন সময় আপনার কানে এসেছিল কিনা?’

আগেই বলেছি হত্যাকান্ডের খবরটাই পেয়েছি স্বয়ং যিনি আমাকে প্রশ্ন করছেন, তাঁরই কাছ থেকে। নিজের কাছে মনে হচ্ছিল এমন কোনো তথ্যতো তাঁকে দিতে পারছিনা যা তাঁর কাজে লাগবে বলে মনে হয়। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরেই আমাকে ‘না’ বলতে হচ্ছে। তবুও তাঁর প্রশ্ন করাতে কোনো বিরক্তি নেই।

তাই আমি বেশ কয়েক মূহূর্ত চিন্তা করতে থাকলাম, এমন কোনো শব্দ কি শুনেছি যা মাথার ভেতর লুকিয়ে আছে, কুকুরের কোন ডাক গতরাতে? তিনিও আগ্রহের সাথে আমার উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছেন।

তবে আবারও বলতে হল, ‘না’।

 ডিটেকটিভ সাহেব এবার উঠে দাঁড়ালেন। স্টেটমেন্ট দেওয়ার জন্য আমাকে আবারও আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানালেন। ফরমটির নীচে সাইন করতে বললেন।  দরজার দিকে এগুতে এগুতে বললেন, আমি যাবার পর রিপোর্টাররা হয়তঃ আপনার সাথে কথা বলতে চাইতে পারে। আমি তেমন কিছু না ভেবেই বললাম, ওকে। তবে মজাটা ক্ষণিকের মধ্যেই টের পেলাম। ডিটেকটিভ সাহেব বাইরে পা দিয়েই দ্রুতই কোন দিকে উধাও হয়ে গেলেন।

 দরজা বন্ধ করারও অবসর পাইনি। শুধু দেখলাম সাঁই সাঁই করে অন্ততঃ তিনটি টিভি চ্যানলের গাড়ী কোত্থেকে এসে হাজির। এবিসি, চ্যানেল নাইন, চ্যানেল সেভেন। আরও দেখি, সামনের মূল রাস্তায় আরও চ্যানেলের গাড়ী দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার নিউজ চ্যানেলের মধ্যে সবচে’ বিখ্যাত, এবিসি (অষ্ট্রেলিয়ান ব্রডকাষ্টিং করপোরেশান), সেটি এসে থেমেছে আমার দরজার ঠিক এক হাত সামনে। দরজা বন্ধ করে দেব ভাবছি, স্মার্ট রিপোর্টার তরুণী ততক্ষণে মাইক্রোফোন হাতে দ্রুত এগিয়ে এল, পেছনে ক্যামেরাম্যানও ততক্ষণে রেডি। সাক্ষাতকার চাই। না বলার উপায় নেই। দেখলাম এই রিপোর্টার তরুণীটির প্রশ্ন ডিটেকটিভ সাহেব থেকেও বেশী শান দেয়া। সে প্রথমেই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করল, ডিটেকটিভ পুলিশটি তোমার সাথে ঠিকমত কথা বলেছে কিনা? তোমার কি কোনো অসুবিধা হয়েছে? সে  কি জানতে চেয়েছে? আমি তাকে জানালাম, ডিটেকটিভ সাহেব খুবই নাইসলি আমার সাথে কথা বলেছেন। বুঝতে পারলাম, টিভি আর পত্রিকাগুলোর রিপোর্টার এই ডাবল মার্ডারের খবর কতটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। আর ডিটেকটিভ সাহেবের প্রতিটা পদক্ষেপ তারা ফলো করছে। সে কি করছে, কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? এদেশে সাধারণতঃ মার্ডার কেসের ক্ষেত্রে পুলিশ যদি ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে আসামী  না ধরতে পারে, অন্ততঃ আসামী কে, তা সম্পর্কে যদি যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা না দিতে পারে, তাহলে সেটিকে পুলিশের একরকম ব্যর্থতা হিসেবেই মিডিয়াগুলো চিত্রায়িত করবে। তাই খুন হবার পরে পুলিশ খুনির পেছনে লাগে আর সাংবাদিক লাগে পুলিশের পেছনে। তাই বুঝলাম ডিটেকটিভ সাহেব কি চাপেই না আছেন, তাঁর কার্যে এতটুকু অনিয়ম হলে রিপোর্টাররা তাঁকে ছিন্নভিন্ন করবে। যাহোক, এবিসি’র তরুণী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আমার অনুভূতি জানতে চাইল। আমি কিছু কথা বললাম। এরপর আমি তিনটি চ্যানেলের সাথে কথা বলে ক্ষান্ত দিয়েছি, বলেছি এখন আমাকে কাজে যেতে হবে, এই বলে দরজা বন্ধ করেছি। পরে টিভিতে দেখেছি আমিসহ আরও দুইজন প্রতিবেশীর সাক্ষাতকার তারা নিতে পেরেছিল যা তারা নিউজে প্রচার করে। অথচ আশেপাশে ১৫-২০ টার মত ফ্যামিলি আছে, তবে কিসের ভয়ে তারা দরজা খুলেনা এখন বুঝতে অসুবিধা হয়না।


ঘরে ঢুকেও যেন স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। বারবার মার্ডারের ব্যাপারটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কে তাদের খুন করতে পারে? কয়েকমাস আগে আমার বাসায় ব্রেক-ইন হয়েছিল। এগুলো সাধারণতঃ তেমন হয়না। কে যেন ঘরে ঢুকে আমার ল্যাপটপ, একটা এক্সট্রা হার্ডড্রাইভ, ওয়ালেট ও পাসপোর্টসহ বেশ কিছু জিনিস চুরি করে নিয়েছিল। দরজাটা খোলাই পেয়েছিলাম। তখন পুলিশে খবর দিলে তারা ডায়েরী করেছিল।এরপর অবশ্য চোর ধরতে পারেনি। এ ব্যাপারটার কথাও আজ যখন ডিটেকটিভ সাহেব প্রশ্ন করছিলেন, তাকেও কথা প্রসঙ্গে উল্লেখ্য করেছি। ডারউইন শহরকে সাধারণতঃ অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের অলিখিত রাজধানী বলা হয়। আদিবাসীদের মধ্যে কারো কারো এসব টুকিটাকি চুরির অভ্যাস আছে বলে নানা পরিসংখ্যানে উল্লেখ। তাই ভাবছিলাম ঐ বৃদ্ধদের বাসায় হয়তঃ ঐ টাইপের কোনো ছিঁচকে চোর ঢুকে পড়েছিল, কিন্তু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাকে চিনে ফেলে অথবা ধরে ফেলে, তখন হয়তঃ সে তাদের খুন করে পালিয়ে যায়। কারণ চুরিতে ধরা খেলেও আইনানুযায়ী তাকে বেশ কয়েক বছর জেল খাটতে হতে পারে। এটাই ছিল আমার আমার সলিউশান। তাছাড়া  কার এমন কি মোটিভ থাকতে পারে এধরণের বয়স্ক দম্পতীদের খুন করার?

 ঐ বাসার পেছনটায় রয়েছে এলাকার সবচে’ বড় পার্কটি। কফি হাতে বসেছি ব্যাল্কুনিতে, দেখি, একদল পুলিশ আর তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো দিয়ে পুরো মাঠটি চষে বেড়াচ্ছে কিসের খোঁজে! বুঝলাম, পার্কটিই কিন্তু খুনীর পালিয়ে যাবার সবচে’ সুবিধাজনক পথ। পুলিশ খুঁজছে পার্কে খুনীটি কোনকিছু ফেলে গিয়েছে কিনা, যেটি কিনা একটি মার্ডার ওয়েপনও হতে পারে।

কিছুক্ষণ পরপর টিভি খুলেও দেখছিলাম, খবরটি প্রচার করা হচ্ছে গুরুত্বের সাথে। নিজেকেও এক অংশে দেখা গেল। ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকেও ডারউইনের লোকাল পেজগুলোতে লোকে নানা মন্তব্য করছে, আইন-পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে। অধিকাংশেরই অভিযোগের অঙ্গুলী আদিবাসীদের দিকেই তাক করানো।

 আর হ্যাঁ,  ডিটেকটিভ সাহেব সেই যে বাসা থেকে গেলেন, তাঁর সাথে আর কোনদিন দেখা হয়নি। একটু খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে, আমি কেন যে কোন শব্দই শুনলাম না? তাহলে তাকে বলতে পারতাম। কিন্তু কি আর করা, আমি যে কিছুই শুনিনি, তাই বলেছি। সেটাই সত্য। তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে ডিটেকটিভ সাহেবের কথা সহসাই টিভিতে প্রচারিত হতে লাগল। সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই তিনি খুনীকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছেন। কিভাবে তা পারলেন? কে সেই খুনী? সে কি কোন আদিবাসী?

 না। আমাদের ধারণাকে ভূল প্রমাণ দিয়ে করে ডিটেকটিভ সাহেব এমন একজনকে ধরলেন যা বোধহয় এ শহরের কারো মাথায়ই আসেনি। টিভির নিউজগুলোতে ডিটেকটিভের দেয়া সাক্ষাতকার ও ব্যাখ্যা শুনে সারাদিনে এই প্রথম মনে হল, ডিটেকটিভকে দেয়া আমার স্টেটমেন্ট কোনোরকমেই অপ্রয়োজনীয় ছিলনা, বরং তার ঐ সব প্রশ্নের উত্তরে আমার  ‘না’ বলা আসলে ঘটনার সাথে সম্পূর্ণই সঠিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণই ছিল। ডিটেকটিভের নিজের কথায় তাঁর অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াগুলোর সার-সংক্ষেপে ছিল এইরুপঃ

“ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ছেলে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে ভোরে টেলিফোন করে জানায় যে, তার মাতাপিতাকে কে বা কারা হত্যা করে অ্যাপার্টমেন্টে ফেলে রেখে গেছে। আমরা তাদের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে মৃতদেহগুলো পাই, তবে দরজা বা জানালা ভেঙ্গে বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করেছে বলে তেমন কোনো চিহ্ন পাইনা। বাড়ীর আশেপাশে এবং পিছনের পার্কে হত্যাকারীর মার্ডার-ওয়েপনটি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও পেতে ব্যর্থ হই। আমি আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশীর সাথে কথা বলতে সমর্থ হই, যাদের প্রত্যেকই জানান যে, তারা গতরাতে ঐ বাসা থেকে কোনপ্রকার সন্দেহজনক শব্দ বা ধ্বস্তাধস্তির আভাষ পাননি। কোনো প্রতিবেশীই বৃদ্ধদ্বয়ের পোষা কুকুরটিকে ডেকে উঠতে শুনেননি। এমতাবস্থায়, আমার দৃঢ় সন্দেহ হয় যে, হত্যাকারী কুকুরটির খুবই পরিচিত ছিল, যে কারণে তার আগমণে সে কোনপ্রকার শব্দ করেনি। এসব আমাকে এটাই ইঙ্গিত করছিল যে, খুনীর অনুপ্রবেশ বাইরে থেকে হয়নি। কারণ প্রতিবেশী, পার্কের মাঠ ও আশেপাশের প্রতিটি জায়গায় আমার অনুসন্ধান করে কিছুই পায়নি, ফলাফল জিরো। এটিই বরং আমার কেসটিকে সঠিক দিকে দেখতে সাহায্য করে। আমি তখন দিনে দ্বিতীয়বারের মত ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ৪০ বছর বয়সের ছেলের সাথে আবারও কথা বলার সিদ্ধান্ত নিই, যে কিনা প্রথম তার মাতাপিতার খুন হওয়ার খবরটি আমাদের ফোন করে জানায়। তাকে আমি তখন পাই শহরের একটি বারে পানরত অবস্থায়। আমি তাকে জিজ্জাসাবাদ করার জন্যই থানায় নিয়ে যাই, যদিও অনেক রিপোর্টার আমি তাকে গ্রেফতার করেছি বলে তখন একটি ছোট্ট খবর ছাড়ে। কিন্তু তখনো আমি তাকে গ্রেফতার করিনি। জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নজালে সে সামঞ্জস্যপূর্ণ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। এরপর বেশী বেগ পেতে হয়নি। এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে যে, সে-ই তার মাতাপিতাকে খুন করেছে একটি ছুরি দ্বারা। তার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আমরা ঐ মার্ডার ওয়েপনটিকেও উদ্ধার করতে সমর্থ হই। খুনীর বেশ কিছু মানসিক সমস্যা আছে, তার কথাবার্তায় মাতাপিতার সাথে তার বেশকিছু তিক্ত সম্পর্কের কথা বেরিয়ে এসেছে। এরপরই আমি তাকে গ্রেফতার করি।’    
 
 
আজমীর হোসেন
৮/১০/২০১৩
ডারূইন, অষ্ট্রেলিয়া

Monday, April 29, 2013

:: আমি কখনো সেলস্‌ম্যান হতে পারিনি ::


জানো আমি কখনো ভাল বিক্রেতা ছিলাম না
মুখে একখানা ভালো হাসি লটকে রাখতে
শিখিনি বলে সেলস্‌ম্যানের চাকরীটাও কপালে জুটেনি।
অথচ দেখ, হাসির যে কি গুণ তা নিয়ে কতকিছু যে পড়েছি,
নিজ হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব
অন্যের দেহমনেও কিভাবে সাঁই করে ছড়িয়ে দেয়,
আর তাতেই না কি দারূণ জমে উঠে জগতের বেচাকেনা।
নেচে উঠে ক্যাশবক্স কচ কচ 
আমি এসব মোটেও অস্বীকার করিনা। 

আমি বরং দেখেছি জগতে সবাই হাসতে শিখছে,
তবলার বিটে নৃত্যশিল্পীর পায়ের ঘুঙুর হাসে,
সূয্যিটা সকালে নির্লজ্জ একগাল হেসে উঠবেই,
পাখিরা কিচ্‌ করে হাসে, ফোক্‌লা দাঁতে খুকুমনি ফিক্‌ করে
বান্ধবীরা কথায় কথায় খিক্‌ করে,
এখন দেখি আবার ফেসবুকে মানুষ হাসে ক্লিক করে।
সবই দেখেছি আর ক্রমাগত হাসতে শিখেছি তাদের কাছ থেকে।

আমি আমার সময়ের অনেক হোমরা চোমরাকেও
দেখেছি হাসতে মাইক বাজিয়ে,
হাসছে প্রাণপণে, প্রাণহীনতায়।
কুকুরে মুখে হাসতে পারেনা বলে সেও হাল ছেড়ে দেয়নি,
মোক্ষম শিখে নিয়েছে কিভাবে হাসতে হয় লেজ দিয়ে ।

অথচ আমার আজও সেল্‌সম্যানের কাজটা জোটেনি,
তবে যেদিন তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়ালে
আমার হাসি সেদিনও তোমাকে দেখাতে পারিনি।
তবে কি জানো,
মুখ ঝরে সেদিন হাসিটা নীচে না পড়লেও
কন্ঠনালী বেয়ে সেটি উঠে গিয়ে
ঠিক ঠিক পৌঁছে গেল আমার মস্তিস্কের নিউরণে,
সেখানে এক স্নিগ্ধ বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে
কিসের যেন আগুন লাগিয়ে দিল
সেই থেকে আমি আর সেল্‌সম্যানের চাকরী খুঁজিনা।

 

আজমীর হোসেন
নাইটক্লিফ, ডারউইন, অষ্ট্রেলিয়া
২৮.০৪.২০১৩

 


এটি কোনো গল্প নয়!

না, এটি কোনো গল্প নয়। ছোট একটি অভিজ্ঞতা। কার কি কাজে লাগবে তা জানিনা। তবে মন চাইল তাই লিখছি। গত সপ্তাহের কথা। সকালের দুটো ক্লাশ শেষ করে ৩০ মিনিট কফি ব্রেক। স্টাফ রুমের বাইরে ছোট্ট একটি বারান্দা। কফি টাইমে এ জায়গাটা চমৎকার। আশেপাশে নানান জাতের গাছ-গাছালি। বাতাস এলে নাচে। এ কলেজের বাগানটি বেশ বড়। আমি এ কলেজে পার্ট-টাইম আসি। দেখি গার্ডেনার (মানে সোজা বাংলায় যাকে বলি মালি), সেও আজ হঠাৎ এসে আমার সাথে কফিতে যোগ দিল।

হ্যালো জেইম্‌স, কেমন আছো? তাকে বেশ ক্লান্তই দেখাচ্ছিল। হাতে-পায়ে ধুলো। একটু আগেও তাকে কতগুলো ইট-সুরকি-আগাছা ইত্যাদি শাবল দিয়ে ট্রাকে তুলতে দেখেছি। পুরো প্রতিষ্ঠানের সবগুলো গাছের যত্ন সেই-ই করে। তার কাজ ও জীবনের অনেক কথাই কথায় কথায় জানালো। সে একজন লাইসেন্সধারী ট্রেইন্‌ড গার্ডেনার। এ প্রতিষ্ঠানে পার্ট-টাইম করে, এছাড়া আরও দুটি বিদ্যালয়েও একই কাজ করে। একটি মাত্র ছেলে। এখাঙ্কার একটি স্কুলে যায়। প্রতিদিন কাজ শেষে সে ছেলেকে স্কুল থেকে ড্রাইভ করে বাড়ীতে নিয়ে যায়। কারণ তার স্ত্রী সাংঘাতিক ব্যস্ত মহিলা। ফুল-টাইম কাজ করে বিধায় সময় দিতে পারেনা, সে বাড়ী ফেরে আরও দেরী করে। আরও বুঝলাম তারা বেশ সুখী পরিবার। তার শুধু একটাই আক্ষেপ, গত বছর কাজ করতে গিয়ে হাটুতে বড় ধরনের একটা ইনজুরি খেয়েছিল, অপারেশান করে ভালো হলেও পুরোপুরি যুকিমুক্ত নয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কিছু কিছু রিস্কি কাজ করার লাইসেন্স হারিয়েছি।'

 'তা তোমার ওয়াইফ কোথায় কাজ করে? সে বলল, ‘এখানে, এ কলেজেই আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তাই নাকি? কই জানতাম নাতো, তা তুমি কোন টিচারের কথা বলছ? আমি তো এখানে সবাইকেই চিনি।

 সে তার স্ত্রীর নাম হিসেবে একটি নামের উল্লেখ করল।

 কফিটা গলায় বোধ হয় মূহূর্তের জন্য একটু আটকে গিয়েছিল নামটা শুনে একটু কি ভিমরি খেয়েছিলাম? ঢোক গিলে আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম বললে? (মনে মনে হয়তঃ ভাবছিলাম, ব্যাটা ফাজলামো করছিস্‌ নাতো)?

সে আবার একই নামটাই আমাকে জানালো!!

 না আমি আর তৃতীয়বার তার ওয়াইফের নাম জিজ্ঞেস করিনি। ততক্ষণে আমার অনুসন্ধানী চোখ চলে গেছে তার শার্টের বামদিকে লাগানো ন্যাম-ব্যাজটির উপর।

কেন জানি পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের কথা মনে পড়ে গেল। বিলেতে যে হোটেল-বয়ের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে উপহার হিসেবে সস্তা পাউরুটি কিনেছিলেন। কিন্তু আমার হাতে তো এখানে কোনো পাউরুটি নেই! তবে কি মনের কোণে অজান্তে পাউরুটি জাতীয় কোনো অনুভূতি কি লুকানো ছিল? তা নাহলে আমি তার স্ত্রীর নাম দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন?

 মালির ন্যাম-ব্যাজটিতে ফ্যামিলি নামের অংশ হিসাবে যার নামটি লেখা আছে সেটি এ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের।

 
আজমীর হোসেন
নাইটক্লিফ, ডারউইন, অষ্ট্রেলিয়া
১১.১১.১২